সুখী হওয়ার উপায়
আ মরা সাধারণত মনে করি জীবনে যার যত বেশি অর্জন সে তত বেশি সফল। আর যার সাফল্য বেশি সেই বেশি সুখী। আসলে কি তাই? তাহলে কিছু মানুষ জীবনে নারী, বাড়ি, গাড়ি এমনকী ঈর্ষণীয় ক্যারিয়ার নিয়েও সুখী হয় না কেন? কারণ, সুখ আর সাফল্য এক জিনিস নয়, অনেকে মনে করেন আগে সাফল্য দরকার, পরে সুখ। অনেকে আবার বলেন—আগে সুখ দরকার, পরে সাফল্য। কারো নিজের ভেতরে যদি সুখ না থাকে তাহলে সাফল্য আসবে কোত্থেকে?
কেবল সফল হলেই সুখী হওয়া যায় না, তার উদাহরণ বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিক লিও টলস্টয়কে দিয়ে শুরু করা যায়। জানা যায়, তিনি তাঁর সাংসারিক জীবনে একদম সুখ পাননি। শেষযাত্রায় স্ত্রীর কাছ থেকে পালিয়ে বাঁচতে তিনি শীতের রাতে গন্তব্যহীন পথে বেরিয়ে পড়েন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, নোবেল বিজয়ীরা নোবেল পাওয়ার পর তাদের সংসারে বিচ্ছেদ ঘটে। অর্থাত্ তারাও অসুখী। অনেক ছাত্র-ছাত্রী মনে করে ভালো ছাত্র হওয়াতে কিংবা ভালো রেজাল্ট করতে বুঝি সব সুখ, কিন্তু এ ধারণাও ভুল। কেননা পৃথিবীর সবচেয়ে নামকরা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী সুখী।
সুখ কী? সুখ হলো মনের আনন্দ, সুখ হলো প্রাণ খুলে হাসা, মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকা। সুখ হলো অন্যের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত না হয়ে বরং আনন্দিত হওয়া। মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, সুখ জিনিসটা আপেক্ষিক। আপনি যা করে আনন্দ পান সেখানেই সুখ রয়েছে। আপনি যদি মনে করেন যে, আমি সুখী তাহলেই আপনি সুখী। আর যদি আপনি মনে করেন আপনি অসুখী, তাহলে পৃথিবীর কোনো কিছুই আপনাকে সুখ এনে দিতে পারবে না। আপনার যা নেই তা নিয়ে আক্ষেপ না করে বরং যা আছে তা নিয়েই সুখী হোন, মনে রাখবেন আপনার চাহিদা যত বেশি সুখ ততো কম হবে। আর চাহিদা যত কম হবে সুখ তত বেশি হবে। আল হাদিসে আছে, মানুষকে যদি ওহুদ পাহাড়ের সমান দুটি সোনার পাহাড় দেওয়া হয় তবুও সে তৃতীয় আরেকটি সোনার পাহাড় কামনা করবে।
সুখী-হাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় অন্যকে সুখী করা। প্রতিদিন কমপক্ষে একজন মানুষকে সুখী করেন অর্থাত্ একজন মানুষের মুখে হাসি ফুটান, দেখবেন-নিজেকে অনেক সুখী মনে হবে। কিন্তু কীভাবে? তার অনেক উপায় আছে। একটি পথশিশুকে একবেলা পেটভরে খাওয়ান বা তাকে একটি নতুন জামা কিনে দিন দেখবেন ঐ পথশিশুটা আপনার কিনে দেওয়া জামাটা পেয়ে যে হাসি হাসবে বিশ্বাস করুন, পৃথিবীতে কোনো অর্থের মূল্য দিয়ে তা কিনতে পারেন না। আপনি একজন রিকশাওয়ালাকে আপনার একটি পুরাতন শার্ট দিতে পারেন। হয়ত আপনার কাছে সেই শার্টটির মূল্য তেমন নেই। কিন্তু ঐ রিকশাওয়ালার কাছে শার্টটির মূল্য অনেক। দেখবেন, শার্টটি পেয়ে রিকশাওয়ালা খুশি হয়ে যাবে এবং সারাটা জীবন সে আপনাকে মনে রাখবে। এর চেয়ে বেশি কিছু জীবনে আর কি চান। এই যে এই বর্ষায় বন্যার কারণে লাখ লাখ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে, আপনার একার পক্ষে সম্ভব না হলে কয়েকজন বন্ধু মিলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন। তাদের দুঃখের কথাগুলো শোনেন, তাদের সঙ্গে একদিন সময় কাটান, তাদের সঙ্গে বসে একদিন খাওয়াদাওয়া করেন, দেখবেন তারা খুশি হবে আর আপনি হবেন সুখী।
No comments